উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ কলার হাট দিনাজপুর,প্রতিদিন লেনদেন কোটি টাকার

অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১০ অক্টবার ২০২৫ | সময়ঃ ০৭:৫১
photo

মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম,দিনাজপুর প্রতিবেদক-:ভোরের প্রথম আলো ফুটতেই জমতে শুরু করে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দশমাইল এলাকার উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ কলার হাট। 

 

মহাসড়কের দুই পাশে সারি সারি করে সাজানো থাকে শত শত কলার কাঁদি। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা কলা চাষিদের ভিড় আর দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত পাইকারদের দরদাম, সব মিলিয়ে এখানে জমে উঠে জমজমাট বেচাকেনা। প্রতিদিন এই হাটে কোটি টাকার কলা কেনাবেচা হয়, যা এখন উত্তরবঙ্গের কৃষি অর্থনীতির এক উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে পরিণত হয়েছে।

 

গত দুই মাস ধরে প্রতিদিন চলছে এই কলা হাটের বেচাকেনা, চলবে আরও প্রায় এক মাস। হাটকে ঘিরে তৈরি হয়েছে কয়েকশ মানুষের কর্মসংস্থান, শ্রমিক, পরিবহন ব্যবসায়ী, হাট ব্যবসায়ীসহ অনেকেই এই হাটের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

 

ভোরে ভ্যান, অটোরিকশা, পিকআপ আর বাইসাইকেলে কাঁদি কাঁদি কাঁচা সাগর কলা নিয়ে আসেন কৃষকরা। পাশাপাশি দেখা যায় সবরি ও মালভোগ জাতের কলা। ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাকে ট্রাকে এসব কলা পাঠানো হয়।

 

কৃষকের মুখে হাসি, ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। শ্রমিকদের মুখেও আনন্দ, মজুরি মিলছে প্রতিদিন।

শ্রমিক আক্কাস আলী বলেন, আমরা অনেকেই আগে বেকার ছিলাম। এখন এই কলার হাটে কাজ করে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করি। এতে সংসারের খরচ চলে যায়, বউ-বাচ্চা নিয়ে ভালোই আছি।

 

কলা চাষি সহিদুল ইসলাম জানান, দুই বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছিলাম। আজ ১০০ কাঁদি কলা ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। যদি এভাবে দাম পাই, তবে ভালো লাভ হবে।

 

আরেক চাষি তারিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি কাঁদি ৪৯০ থেকে ৫২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চার বিঘা জমির দুইটি বাগান থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে আশা করছি।

 

ঢাকা থেকে আসা পাইকার  সোলেমান তালুকদার বলেন, প্রতিদিন তিন ট্রাক কলা কিনে ঢাকায় নিয়ে যাই। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ব্যবসা ভালো চলছে।

 

ফেনী থেকে আসা আরেক পাইকার হায়দার মজুমদার বলেন, এক মাস আগে দাম একটু বেশি ছিল। এখন সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু তবুও কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না।

কাহারোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মল্লিকা রানী সেহানবীশ বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩২৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। কলা একটি লাভজনক ফসল। আমাদের কৃষি বিভাগ নিয়মিত চাষিদের সার্বিক পরামর্শ ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।ভালো ফলন হয়েছে, কৃষকরা ন্যায্য দামই পাবেন আশা করছি।

 

প্রতিদিনের লেনদেন ছুঁই ছুঁই কোটি টাকা। এই কলা হাট শুধু কৃষকদের আয়ের উৎস নয়, এটি এখন একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র। প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। স্থানীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাবও চোখে পড়ার মতো।

স্থানীয়রা বলেন, এই কলা হাট না থাকলে এলাকায় এত কর্মসংস্থান হতো না। ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়ে গেছে, এলাকা প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

দশমাইলের কলা হাট এখন শুধু একটি হাট নয়, এটি উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতির এক প্রাণকেন্দ্র, কৃষকের আশীর্বাদ আর জীবিকার উৎস।

শেয়ার করুন